ভার্জিন সরিষার তেল কি? বাংলাদেশে তেল উৎপাদন পদ্ধতি কি কি?

শুধুমাত্র এক জাতের সরিষা বীজ, দুই বা ততোধিক সরিষা বীজ মিশিয়ে তেল উৎপাদন করলে সেই তেলকে ভার্জিন বলা যায় না। মিলিং এর পদ্ধতি কোল্ড প্রেসড হতে হবে। অর্থাৎ মিলিংয়ের পুরো সময় তেলের তাপমাত্রা ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম থাকতে হবে। মিলিং এর শুরুতে তেল ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল কিন্তু ৩ ঘন্টা পর তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে গেল, এমন হলে তাকে কোল্ড প্রেসড তেল বলা যায় না। মিলিং পরবর্তি সময়ে এমনভাবে ফিল্টার করতে হবে যাতে ফিল্টারের সময়ও তেলের তাপমাত্রা ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে না যায়, এক্ষেত্রে ভ্যাকুয়াম ফিল্টার বেশ ভালো সমাধান। ফিল্টার শেষ হলে বোতলজাত করার সময় কোন ধরণের প্রিজারভেটিভ বা কেমিকেল মিশ্রণ করা যাবে না। একমাত্র এইসব শর্ত ঠিক থাকলেই সে তেলকে ভার্জিন সরিষার তেল বলা যায়।

বাংলাদেশে বিভিন্ন তেল উৎপাদন পদ্ধতি:

পাকিস্তান, ভারত এবং বাংলাদেশে তেল উৎপাদনে কাঠের ঘানি, লোহার ঘানি ও এক্সপেলার মেশিন ব্যবহার করা হয়। ঘানিতে তাপমাত্রা ৪৯ ডিগ্রির নিচে থাকে, কিন্তু ঘানিতে মিলিং করার সময় তেলবীজের সাথে সলভেন্ট হিসেবে পানি মেশানো হয়। বিজ্ঞানের ভাষায় পানিও একটি কেমিকেল। ঘানি ও এক্সপেলার উভয় মেশিনেই সরিষার সাথে পানি মেশানো হয়। পানির পরিমান ১০ কেজি তেলবীজে ৭০০ এমএল থেকে ১ লিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে, যা সরিষার সাথে মেশানো হয় সরিষাকে ভেজা ভেজা করার জন্য, পানির প্রভাবে রাসায়নিক বিক্রিয়া শুরু হয় যা সরিষার ঝাঁজ তৈরীর জন্য গুরুত্ত্বপূর্ণ বলে অনেকে মনে করেন। ইংরেজিতে “The addition of water helps in the hydrolysis of thioglucosides (glucosinolates) present in the seeds, thus releasing the pungency producing essential oil of mustard.” অর্থাৎ পানির প্রভাবে সরিষার ভেতরে থাকা থায়োগ্লুকোসাইড এর হাইড্রলিসিস বা কেমিকেল রিঅ্যাকশন শুরু হয় ফলে ঝাঁজ তৈরী হয়। একটা ঘানিতে ১০ কেজি সরিষা প্রায় ২ ঘন্টা সময় ধরে মিলিং চলে, মিলিংএর সময় তেলের সাথে পানি মিশে যায়। পরবর্তিতে এই তেল ৭-১০ দিন থিতানো হয় অথবা মিলিং এর পরপরই বিক্রি করা হয়। অনেকে মনে করেন, ৭-৮ দিন পানিসহ তেল থিতানোর কারণে তেলের ভেতর এসিড ফর্ম করে, যার কারণে তেলে ঝাঁজ হয়। অনেকে তেল রোদে দিয়ে তারপর বোতলজাত করেন। যদিও তেলকে সরাসরি রোদের তাপে রাখলেও গুণগত মান কমে যায়। কারণ রোদের তাপে তেল ৪৯ ডিগ্রির বেশী প্রায় ৬০-৭০ ডিক্রি সে. পর্যন্ত গরম হয়, এবং আলট্রাভায়োলেট রশ্মির কারণে তেলের রং এবং ভিটামিনসহ অন্যান্য গুণাগুণে পরিবর্তন আসে বলেই সায়েন্টিস্টরা বলে থাকেন। অন্যদিকে এক্সপেলার মেশিনে সম্পর্কে খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (কুয়েট) এর একটি গবেষণা হয়েছে। রিসার্সগেট ডট নেট ওয়েবসাইট থেকে এই গবেষণাপত্রটি ডাউনলোড করে পড়ে নিতে পারেন। সেখানে বলা হয়েছে যে এক্সপেলার মেশিনের তেলের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশী গরম হয়, বিভিন্ন এক্সপেলার মেশিনের ক্ষেত্রে তারা এমনই রেজাল্ট পেয়েছেন।

বাংলাদেশের ঘানি বা এক্সপেলার মেশিনের তেলকে ভার্জিন বলা যাবে কি যাবে না, বা এই তেলের গুণমান নিয়ে পুষ্টিবিদ এবং ফুড ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ করার অবকাশ রয়েছে। যেহেতু পানি দেয়ার ফলে পানির সাথে থায়োগ্লুকোসাইযের রাশায়নিক বিক্রিয়া হচ্ছে, সেহেতু এটাকে ভার্জিন বলা যায় না। কোন ধরনের সলভেন্ট ব্যবহার না করে ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম তাপে সরিষার তেল উৎপন্ন হলে সেই তেলকেই ভার্জিন সরিষার তেল বলা সমিচিন।

ভার্জিন তেল কিভাবে চিনবেন?

ভার্জিন তেল আমরা অনেকেই চাই কিন্তু চিনতে পারি না। ভার্জিন তেল চিনতে হলে কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় রাখবেন: প্রথমত এই তেলের ঘ্রাণ থাকবে বীজের ঘ্রাণের কাছাকাছি, সরিষা দাঁতে ভাঙলে যেমন ঘ্রাণ অনুভূত হয় তেমন ঘ্রান পাবেন। পানি বা কেমিকেল ব্যবহার হবে না ফলে, ঝাঁঝ থাকবে না অথবা মৃদু ঝাঁঝ থাকতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *